বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

অগ্রগামী সুমন কুমার দাশ। শুভ হোক চল্লিশের অভিযাত্রা।- ড.সাইমন জাকারিয়া

অগ্রগামী সুমন কুমার দাশ। শুভ হোক চল্লিশের অভিযাত্রা।- ড.সাইমন জাকারিয়া

অগ্রগামী সুমন কুমার দাশ। শুভ হোক চল্লিশের অভিযাত্রা।- ড.সাইমন জাকারিয়া

অগ্রগামী সুমন কুমার দাশ। শুভ হোক চল্লিশের অভিযাত্রা।

সুমন বহু আগেই কর্ম দিয়ে নিজের বয়সকে অতিক্রম করে গেছেন। যা রীতিমত বিস্ময়কর। অবাক হয়ে দেখতে পাই, বাংলাদেশের জনসংস্কৃতিধর্মী ফোকলোর গবেষণা, সংকলন-গ্রন্থন ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি এমন কিছু অভিনবত্ব সংযোজন করেছেন যা তাঁর পূর্বে কেউ করেননি, অথবা করলেও তাঁর মতো দৃষ্টিভঙ্গির অভিনবত্ব দিয়ে আগে কেউ গ্রন্থন, সম্পাদন করতে সক্ষম হননি। যেমন, বেদেসংগীত, ভিক্ষুকসংগীত, বাংলাদেশের ধামাইল গান, বাউলগানে বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি প্রণয়নে সুমন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া, একটি বিষয়কে নিয়েও বহু গ্রন্থ প্রণয়নে সুমন আরেক ধরনের অভিনবত্ব প্রদর্শন করেছেন। যেমন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাধক কবি শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্মকে নিয়ে বহু ধরনের গ্রন্থ প্রণয়নে তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর গ্রন্থ ভাণ্ডারের মধ্যে রয়েছে “শাহ আবদুল করিম: জীবন ও গান”-এর মতো উন্নতমানের গবেষণাকর্ম, লিখেছেন শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে নাটক “ভাটির বাউল”, লিখেছেন শাহ আবদুল করিম-জীবনী “বাংলা মায়ের ছেলে” ও “বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম”, শাহ আবদুল করিমের গণসংগীত নিয়ে লিখেছেন “গণগীতিকার শাহ আবদুল করিম”। পাশাপাশি সম্পাদনা করেছেন “সাক্ষাৎকথায় শাহ আবদুল করিম”, “শাহ আবদুল করিম সংবর্ধন-গ্রন্থ”, “শাহ আবদুল করিম স্মারকগ্রন্থ”, “প্রসঙ্গ শাহ আবদুল করিম” প্রভৃতি। অবশ্য এরবাইরেও শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে তাঁর আরও মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে।


নিজের জনসংস্কৃতি সমীক্ষণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বয়ান সুমনকুমার দাশের গবেষণার অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য। যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর “লোকসংস্কৃতি লোকসাধক”, “বাংলাদেশের বাউল ফকির লোকশিল্পী”, “লোকগান লোকসংস্কৃতি”, “বাউলেরা আখড়ায় ফকিরের ডেরায়”, “লোকায়ত বাংলার পথ ধরে” প্রভৃতি গ্রন্থে। প্রতিটি গ্রন্থে সুমন বই-পুস্তকে পাওয়া জ্ঞানের পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতায় প্রাপ্ত জ্ঞানের বিস্তার করেছেন। সাম্প্রতিককালের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রবাহমানতা সম্পর্কে জানতে গেলে সুমনের গবেষণাকর্ম পাথেয় হয়ে ওঠে।


সুমনের গবেষণায় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সংগীত সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক তৎপরতা প্রধানভাবে প্রতীয়মান হলেও সমগ্র বাংলাদেশের বাউল-ফকির সাধকদের জীবন ও সংগীত অধ্যায়নের জন্য তিনি অসাধারণ একটি দায়িত্ব পালন করেছেন “বাংলাদেশের বাউল ফকির: পরিচিতি ও গান” শিরোনামে একটি মহাগ্রন্থ প্রণয়নের মাধ্যমে। এই গ্রন্থে একদিকে সুমন বাউল-ফকিরদের জীবন ও গান সম্পর্কে নিজের কিছু মূল্যায়নধর্মী প্রবন্ধ সংকলন করেছেন, অন্যদিকে বাউল-ফকিরদের জীবনীসহ তাঁদের রচিত গান সংকলন করেছেন। একটি গ্রন্থের ভেতর দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের বাউল-ফকিরদের পরিচয় ও গান অন্তর্ভুক্ত করার এমন দুঃসাহস সুমন ছাড়া এই বাংলাদেশে আর কারো আছে বলে আমার জানা নেই।


সুমনকুমার দাশ “অগ্রন্থিত রাধারমণ”, “আরকুম শাহ সমগ্র” “দুর্বিন শাহ সমগ্র”, “কফিল উদ্দিন সরকারের গান”, “মছরু পাগলার গান”, “মরিলে কান্দিস না আমার দায়: গিয়াসউদ্দিন আহমদের নির্বাচিত গান” প্রভৃতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগীত গবেষণায় অবিস্মরনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।


সুমনকুমার দাশের অভাবনীয় সৃজনশীলতার কথা বলতেই হয়, তিনি গীত রচনায় এরমধ্যে অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া, তাঁর রচিত কাব্য ও উপন্যাস “চাঁদ উঠেছিল তিন জোড়া চোখের মাপের”, “সামান্থা”, “আফালে ভাঙে মরা নক্ষত্র পোড়া চউখ” আমাদের দৃষ্টি ও হৃদয়কে আকৃষ্ট করে।


সুমনকুমার দাশ আত্মপ্রচারণায় বিশ্বাসী নন, এমনকি কোনো ধরণের পুরস্কার প্রয়াসী ভিক্ষুকমনের গবেষক বা সাহিত্য স্রষ্টা নন। তাই তো আপন মনে নিজের আনন্দে সুদূর সিলেটে থেকেও হয়ে উঠেছেন অনন্য ও অগ্রগামী এক সুমনকুমার দাশ। তাঁর নির্মোহ সাধন-কর্মই একদিন কর্মফল হাতে তুলে দেবে। সেই দিন আমরা আরও বেশি করে অগ্রগামী সুমনের বন্দনা করবো। আজ এ পর্যন্তই।
শুভ কামনা সুমন। অনেক ভালোবাসা। মঙ্গল হোক।

বিনীত @ সাইমন জাকারিয়া

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD